পেছন
থেকে কে যেন ডাক দিল, চেয়ে দেখি আমার বন্ধু সমর । অনেকদিন আগেই মারা গেছে । মারা
যাওয়ার পরেও দেখতে পাচ্ছি, এর মানে আর কিছুই নয় আমি স্বপ্ন দেখছি । স্বপ্ন দেখছি
মনে পড়তেই মনে পড়লো আজকের দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতই বাজে কেটেছে, অনেক আশা নিয়ে ঘুমিয়েছি
সুস্বপ্ন বড়ি খেয়ে । আশা আর কিছুই নয়, বড়িটা যেন কাজে আসে, যেন স্বপ্নটা সু-ই হয় । আসলে,
অন্যদের কাছে সু এর যে মানে আমার কাছে তা নয়, ফলত কাজ হয় উল্টা । আর এসব সাবকন্সাস
মাইন্ড নিয়ন্ত্রণকারী কোন রসায়নই ঠিকঠাক কাজ করেনা । আমার তো মনে হয় এসব কিছু
ভাওতা ছাড়া কিছুই নয় । যাই হোক, স্বপ্নটা দেখি ।
বন্ধু
চল, সমুদ্রে ঝাঁপ দেই । সমুদ্র নাকি বিষাক্ত হয়েছে, ওক্টোপাসেরা সব মারা যাচ্ছে,
বন্ধু চল, মারা যাই । আমি বললাম, শালা, তোর চোখে কেবল অক্টোপাসরাই পড়ছে ? বড় বড়
নীল তিমি গুলো পড়ছেনা ?
সমর
বলল, ও হ্যাঁ, তাইতো, একদম দেখতে পাইনি । শুনেছি নীল তিমিরা সমুদ্রে থাকে কিন্তু,
খুব বড় তো তাই খালি চোখে দেখিনা । ছেলে বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল একটা বৃহৎবিক্ষন
যন্ত্র কিনি, কিন্তু সংসারের টানাটানিতে আর হয়ে ওঠেনি । মনে পড়লো সমরের কথা, সে
যথেষ্ট গরিব ছিল । ক্ষমতা ছিলনা কিচ্ছুটি করার, জীবনে কিচ্ছু করতেও পারেনি । একসময়
সে মারা যায় । কেন মারা গেল ? কেউ কেউ বলেছিল সে নাকি নিজে থেকেই মরেছিল... মানুষও
কত কি বলে, নিজে নিজে কখনো কেউ মরতে পারে নাকি ? মানুষ নিজে নিজে কিছুইতো করতে
পারেনা । তবুও মানুষ বলে, মানুষ নিজে নিজে মরে যায় । মানুষ বলতেইবা পারে কোথায় ?
মানুষ বলেনা, তিনি বলিয়ে নেন ।
আমি
জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় ছিলে এতদিন ?
বলল,
ছিলাম নাতো, কোথাও ছিলাম না । তুই আমাকে সৃষ্টি করলি, আমি এলাম । তুই আমার স্রষ্টা
। প্রণাম গ্রহন কর প্রভু ।
বললাম,
ধুর ধুর, কি সব বলছিস !
বলল,
যা বলছি সত্য বলছি । এই সত্য অনেকেই জানেনা, যারা জানে তারাও গোপন করে রাখে । সৃষ্টিই
স্রষ্টা । স্রস্টাই সৃষ্টি । কখনো তুই আমাকে সৃষ্টি করছিস, কখনোবা আমি তোকে সৃষ্টি
করছি । তোর পোষা মাকড়সা অব্দি তোকে কনায় কনায় সৃষ্টি করেছে । তুই আমার প্রভু, আমিও
তোর প্রভু । আমার প্রণাম গ্রহন কর ।
বললাম,
আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে, করলাম গ্রহন । এবার চল কিছু খাওয়া যাক ।
মিষ্টান্ন
ভাণ্ডারে গেলাম দুজনে । ওখানে আরেক কাণ্ড, ছোকরা ছেলেটা কাগজ পেতে আমাদের চিনি এনে
দিল । সমর খেপে গেলো, “এই শুওরের বাচ্চা, তোর এখানে কি চিনি খেতে এসেছি?”
ছোকরা
ছেলেটা মুখে কিচ্ছু না বলে একটা ছোরা নিয়ে এসে তার হাতের আঙ্গুল গুলো একটা একটা
করে কেটে দিতে লাগলো । সমর সেই আঙ্গুলে চিনি লাগিয়ে খেতে লাগলো, ঠিক যেরকম লোকেরা
তেতুল খায় সেরকম । ভয়ে আমার শরীর প্রায় অবশ, এক দৌড়ে বেড়িয়ে এলাম । সে কি ! জল এল
কোথা থেকে ? শুধু জল নয়, জলের সমুদ্র । আমি ডুবে গেলাম ।
ঘুম
যখন ভাঙল, দেখলাম আমি সমুদ্রের একদম নীচে । সমর আর তিনজন অক্টোপাস তাস নিয়ে বসে
আছে আমার অপেক্ষায়...
0 মন্তব্যসমূহ