লিখেছেন দিব্যেন্দু নাথ
নিবিড় রাতে বিদ্যুত্ চমকানোর মতো অঞ্জনার মনে আনন্দ আর
ভয় হচ্ছিল। ছোড়দা যখন ফিরেছে,রাত তখন তিনটের কম নয়।
ছোড়দার মন-রক্ষার্থে দীপও ত মাঝেমধ্যে গ্লাস টানে! ভাবের
ঘোরে যদি সবকিছু ঢেলে দেয় ছোড়দাকে....! এই থেকে কচু-বনের মশা যেন বুকের মাঝে আনাগোনা করেছে সারারাত।
ভোরবেলা ছোড়দার স্বাভাবিক-মাঠে যাওয়া দেখে, আশ্বস্ত
হয়েছে অঞ্জনা,কিছু বলেনি দীপ। এখনো বেগুড়ে ঘুমোচ্ছে সে ছোড়দার বিছানায়। দখিন জনালা
খোলা। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদীর তিরতির বাতাস। ভোরের এক বুক সোনালি আলো, জানালায়
উঁকি দিচ্ছে দীপকে জাগাতে। কিন্তু পারছে না, উপরন্তু সে বালিশ মাথার উপর তুলে নাক ডাকাচ্ছে।
অঞ্জনা শশব্যস্ত হয়ে পশ্চিম ঘর থেকে দখিন ঘরে এসেছে। গায়ে ঢিলেঢালা নাইটি। বুকের দুটো
বোতাম খোলা। রাতের টেনশনে কখন যে খুলে গেছিল বলতে পারেনি।
মনের ভেতর একঝাঁক উৎফুল্ল পায়রা। সে গুনগুন গাইতে গাইতে,
দীপের বালিশটা মাথার উপর থেকে তলায় দিল। টাঙানো মশারির ভেতর নিজেকে গলিয়ে রসালো ঠোঁট
ঘুমন্ত দীপের গালে, কপালে- শাপলাফুলের পাপড়ির উড়ন্তভ্রমরকে আলতো চেপে ধরার মতো স্পর্শ
করাতে লাগলো। সহসা টের পেলো, দীপের বুকের থিকথিকে কালোলোম যেন শিরশিরিয়ে ঢুকে যেতে
লাগলো তার হৃদকমলে।আর .......বিদ্ধ হতে লাগলো সে।
এই মুহূর্তে
নারিকেল কাণ্ডে দুটো শালিক এসে বসেছে। তাদের পাতলা ঠোঁটে, ফুরফুরে কিছু কর্কশ শব্দ।
তারা ঝগড়া নাকি খুনসুটি করছে ,বুঝা যাচ্ছে না। পুলকিত অঞ্জনা দীপের কানের কাছে ফিসফিসে
বলল
- চোখ খুলে দেখো, শালিক জোড়া কি বলছে!
- নিশ্চয়ই কোনো প্রেমের কথা!
- না গো। ওদের বোধহয়, ঝগড়া বেঁধেছে।
- তাহলে নিশ্চয় শালিকনী বলেছে, তুমি আমার কেউ নয়!
-হয়তো শালিকও কাল রাত দেরি করে ফিরেছে।
বলতে না বলতেই দীপ অঞ্জনাকে পিঠ ঠেসে জড়িয়ে, ঠোঁট চুপসে
ধরল। আর অঞ্জনা, তার গলায় জড়িয়ে এলো। দুজনেই চুপচাপ-----সময় বাজছে ঠিক ঠিক.......! ঘচসহসা শালিক দেখে তেড়ে এল একটি কেচকেচি। এদিকে
বৌদি উঠোন ঝাট দিচ্ছিলেন, কেচকেচির কেচকেচে অশুভআশঙ্কায় তার বুক ক্ষেপে উঠলো, আর দূর
দূর করে তেড়ে এলেন, জানালার দিকে ঝাড়ু তুলে। অমনি অঞ্জনা, দীপের হাত খসিয়ে দৌড় দিল
দরজার দিকে.....। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, এই যে খোকাবাবু, বেলা যে বয়ে যাচ্ছে, এবার
উঠে ফ্রেস হয়ে নাও, যেতে হবে......
0 মন্তব্যসমূহ